গায়েবানী মুসলমানি বলতে সাধারণত গ্ল্যান্ডুলার হাইপোস্পাডিয়াস বোঝায়, যা জন্মগত একটি অবস্থা। এতে শিশুর লিঙ্গের মূত্রনালী (urinary opening) স্বাভাবিক স্থানে না থেকে কিছুটা নিচের দিকে থাকে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে মনে হতে পারে যে খৎনা (মুসলমানি) স্বাভাবিকভাবেই হয়ে গেছে।
⸻
১. হাইপোস্পাডিয়াস কী?
হাইপোস্পাডিয়াস হল এমন একটি জন্মগত অবস্থা যেখানে শিশুর লিঙ্গের মূত্রনালী সঠিক স্থানে না থেকে লিঙ্গের নিচের অংশে অবস্থান করে। সাধারণত লিঙ্গের মাথার ঠিক মাঝখানে ছিদ্র থাকার কথা, কিন্তু হাইপোস্পাডিয়াস থাকলে তা নিচে চলে যায়।
✅ গ্ল্যান্ডুলার হাইপোস্পাডিয়াস: এটি হাইপোস্পাডিয়াসের সবচেয়ে হালকা ধরণ, যেখানে ছিদ্রটি লিঙ্গের অগ্রভাগে থাকে তবে নিচের দিকে।
✅ করোনাল, পেনাইল ও পেনোস্ক্রোটাল হাইপোস্পাডিয়াস: এগুলো অপেক্ষাকৃত গুরুতর অবস্থার মধ্যে পড়ে।
⸻
২. গায়েবানী মুসলমানির কারণ কী?
এটি মূলত জন্মগত একটি সমস্যা, যা সাধারণত শিশুর ভ্রূণ অবস্থায় লিঙ্গের গঠনে কিছু পরিবর্তনের কারণে হয়।
মূল কারণসমূহ:
✔ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: গর্ভাবস্থায় শিশুর টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কম হলে লিঙ্গের গঠন সঠিকভাবে হয় না।
✔ জেনেটিক কারণ: যদি পরিবারের কারও আগে এই সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে এটি শিশুর মধ্যেও আসতে পারে।
✔ পরিবেশগত কারণ: গর্ভাবস্থায় কিছু রাসায়নিক বা ওষুধের প্রভাব শিশুর লিঙ্গের বিকাশে বাধা দিতে পারে।
✔ অপর্যাপ্ত টিস্যু বৃদ্ধি: লিঙ্গের অগ্রভাগের টিস্যুগুলো সঠিকভাবে না বাড়লে মূত্রনালী নিচের দিকে থাকতে পারে।
⸻
৩. গায়েবানী মুসলমানির লক্ষণ ও চিহ্ন
✅ লিঙ্গের ছিদ্র স্বাভাবিক স্থানে না থেকে নিচের দিকে থাকে।
✅ প্রস্রাব করার সময় মূত্রের প্রবাহ সামান্য বাঁকা হতে পারে।
✅ লিঙ্গের সামান্য বাঁক থাকতে পারে, যদিও এটি গুরুতর না হলে তেমন সমস্যা হয় না।
✅ অনেক ক্ষেত্রে খৎনা (circumcision) না করলেও মনে হয় যে খৎনা হয়ে গেছে।
⸻
৪. সমস্যাগুলো কী হতে পারে?
যদি হালকা হয় (গ্ল্যান্ডুলার হাইপোস্পাডিয়াস), তাহলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে—
✅ শিশুদের ক্ষেত্রে:
• প্রস্রাবের প্রবাহ ঠিকমতো না হওয়া।
• লিঙ্গের সামান্য বাঁক থাকা।
✅ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে:
• ভবিষ্যতে যৌনজীবনে সমস্যা হতে পারে (যদি লিঙ্গের বাঁক গুরুতর হয়)।
• সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হতে পারে (খুব গুরুতর অবস্থায়)।
• ব্যক্তিগত ও মানসিক অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।
⸻
৫. গায়েবানী মুসলমানির চিকিৎসা ও সমাধান
চিকিৎসা দরকার হয় কি না?
✔ যদি মূত্রনালী খুব সামান্য নিচে থাকে এবং কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে চিকিৎসার দরকার নেই।
✔ যদি প্রস্রাবের সমস্যা হয় বা লিঙ্গের বাঁক বেশি থাকে, তাহলে চিকিৎসা করা দরকার।
চিকিৎসার ধাপ:
✅ নিরীক্ষা: শিশুর জন্মের পর ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখেন যে এটি কোনো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করছে কিনা।
✅ সার্জারি (প্রয়োজন হলে):
1️⃣ মূত্রনালীর ছিদ্র ঠিক করা হয় (Urethroplasty)।
2️⃣ যদি লিঙ্গ বাঁকা থাকে, তবে সেটিও ঠিক করা হয়।
3️⃣ সাধারণত ৬ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে সার্জারি করা হয়।
4️⃣ সার্জারির পর শিশুর প্রস্রাবের স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে।
সার্জারির পরে করণীয়:
✔ শিশুকে ১-২ সপ্তাহ বিশেষ যত্নে রাখা হয়।
✔ ডাক্তার কিছু ওষুধ ও ব্যথানাশক দিতে পারেন।
✔ প্রস্রাবের নালি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
⸻
৬. সার্জারি ছাড়া কি এটি ঠিক হয়?
✔ যদি খুব হালকা হয় এবং কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে সার্জারি প্রয়োজন হয় না।
✔ তবে যদি প্রস্রাব করতে সমস্যা হয় বা ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা থাকে, তাহলে ডাক্তার সার্জারির পরামর্শ দিতে পারেন।
⸻
৭. ভবিষ্যতে সমস্যা এড়ানোর উপায়
✅ গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
✅ যদি জন্মের পর লিঙ্গের গঠনে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারকে দেখানো।
✅ শিশুর লিঙ্গ পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা, যাতে সংক্রমণ না হয়।
ডাঃ এস, এম, নাজমুল ইসলাম
এমবিবিএস, এমএস( শিশু সার্জারী)
মেম্বার হাইপোসপেডিয়াস ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি
পেডিয়েট্রিক ইউরোলজি ট্রেনিং(ইন্ডিয়া)
ইউরোলজি ট্রেনিং (BSMMU)
নবজাতক, শিশু-কিশোর সার্জারী বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট।
Hotline: 01777331511
www.drnazmulislam.com
চেম্বারঃ
অ্যালায়েন্স হসপিটাল লিমিটেড
২৪/৩ খিলজী রোড (রিং রোড)
শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭
রুগি দেখার সময়ঃ বিকাল ৫:০০ – সন্ধ্যা ৭: ০০টা।
(শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন)