হার্শপ্রাং ডিজিজ (Hirschsprung Disease) হলো একটি জন্মগত অন্ত্রের সমস্যা, যেখানে শিশুর বৃহৎ অন্ত্রের (কোলন) কিছু অংশ স্নায়ুকোষ (ganglion cells) ছাড়া থাকে। ফলে সেই অংশ মল সরানোর জন্য সংকোচন (peristalsis) করতে পারে না, যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের ব্লকেজ তৈরি হয়।
⸻
হার্শপ্রাং রোগের কারণ: ✅️
হার্শপ্রাং রোগের মূল কারণ হলো স্নায়ুকোষের (ganglion cells) অনুপস্থিতি, যা গর্ভাবস্থায় অন্ত্রের স্বাভাবিক বিকাশের সময় গঠিত হয় না।
• জেনেটিক কারণ:
• প্রায় ২০% ক্ষেত্রে এটি পারিবারিক বা বংশগত হয়ে থাকে।
• কিছু নির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন (RET gene mutation) এই রোগের জন্য দায়ী।
• ডাউন সিনড্রোম (Down Syndrome) এবং অন্যান্য জেনেটিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে হিরশস্প্রুং রোগ বেশি দেখা যায়।
• অন্ত্রের নার্ভের অসম্পূর্ণ বিকাশ:
• ভ্রূণের বিকাশের সময় ১০-১২ সপ্তাহের মধ্যে নার্ভ সিস্টেম তৈরি হয়।
• যদি স্নায়ুকোষ অন্ত্রের শেষ অংশ পর্যন্ত না পৌঁছায়, তবে সেই অংশ সংকুচিত হয়ে থাকে এবং স্বাভাবিকভাবে মল সরাতে পারে না।
⸻
হার্শপ্রাং রোগের লক্ষণ: ✅️
লক্ষণগুলো শিশুর বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে:
১. নবজাতকের ক্ষেত্রে:
• জন্মের ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মলত্যাগ না করা (Meconium Pass না হওয়া)
• পেট ফোলা ও শক্ত হয়ে যাওয়া
• বমি হওয়া (সবুজ বা হলুদ রঙের)
• খেতে না চাওয়া ও অতিরিক্ত কান্না করা
২. বড় শিশুর ক্ষেত্রে:
• দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য (Chronic Constipation)
• পেট ব্যথা ও গ্যাস জমে থাকা
• মলত্যাগে কষ্ট ও পাতলা ডায়রিয়ার মতো মল (Overflow Diarrhea)
• ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে না ওঠা
৩. জটিলতা থাকলে:
• এন্টারোকোলাইটিস (Enterocolitis):
• অন্ত্রের মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে।
• লক্ষণ: উচ্চ জ্বর, রক্ত-মিশ্রিত পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা ও ফোলা
• জীবন-হানিকর হতে পারে, তাই জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
⸻
হার্শপ্রাং রোগের ডায়াগনোসিস (নির্ণয়): ✅️
১. এনামা এক্স-রে (Barium Enema X-ray):
• কোলনে ব্যারিয়াম ডাই প্রবেশ করিয়ে এক্স-রে করা হয়, যাতে ব্লকেজ ও সংকোচন ধরা পড়ে।
২. রেক্টাল ম্যানোমেট্রি (Rectal Manometry Test):
• অন্ত্রের রেক্টামে একটি বেলুন ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়, যেখানে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া না থাকলে এটি হিরশস্প্রুং রোগের ইঙ্গিত দেয়।
৩. বায়োপসি (Rectal Biopsy) – সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা:
• অন্ত্রের ভেতর থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়, যাতে নার্ভ কোষের অনুপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়।
⸻
চিকিৎসা: ✅️
হার্শপ্রাং রোগের সার্জারি
এই রোগের একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার (Surgery)।
১. পুল-থ্রু সার্জারি (Pull-through Surgery):
• আক্রান্ত অন্ত্রের অংশ কেটে ফেলে সুস্থ অংশকে সংযুক্ত করা হয়।
• বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি একবারেই কার্যকর হয়।
২. কোলস্টমি বা আইলিওস্টমি (Colostomy/Ileostomy) – গুরুতর ক্ষেত্রে:
• যদি শিশু মারাত্মক অসুস্থ হয়, তাহলে প্রথমে অন্ত্রের সুস্থ অংশকে পেটের বাইরে একটি ছিদ্রের (স্টোমা) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়, যাতে মল সহজে বাহির হতে পারে।
• পরবর্তী সময়ে পুল-থ্রু সার্জারি করে অন্ত্রকে স্বাভাবিক করা হয়।
⸻
সার্জারির পর জীবনযাত্রা ও যত্ন: ✅️
১. খাদ্যাভ্যাস:
✔ প্রচুর পানি পান করানো – কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক।
✔ আঁশযুক্ত খাবার (ফল, সবজি, দই) – অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
✔ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার কমানো – কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়।
২. টয়লেট ট্রেনিং:
✔ নিয়মিত টয়লেট করার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
✔ কিছু শিশু সার্জারির পর মল ধরে রাখতে কষ্ট পেতে পারে, তাই ধৈর্য ধরতে হবে।
৩. ইনফেকশন প্রতিরোধ:
✔ সার্জারির পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
✔ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ফলো-আপ করা।
⸻
হার্শপ্রাং রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ✅️
✔ সঠিক চিকিৎসা পেলে বেশিরভাগ শিশু স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
✔ কিছু ক্ষেত্রে সামান্য কোষ্ঠকাঠিন্য বা মল ধরে রাখার সমস্যা থাকতে পারে, তবে এটি চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
✔ গুরুতর জটিলতা এড়াতে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ❇️❇️❇️
ডাঃ এস, এম, নাজমুল ইসলাম
পেডিয়েট্রিক ইউরোলজি ট্রেনিং (ইন্ডিয়া)
সহকারী অধ্যাপক
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট।
Hotline: 01777331511
www.drnazmulislam.com
চেম্বারঃ
অ্যালায়েন্স হসপিটাল লিমিটেড
২৪/৩ খিলজী রোড (রিং রোড)
শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭
রুগি দেখার সময়ঃ বিকাল ৫:০০ – সন্ধ্যা ৭: ০০টা।
(শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন)
