হাইপোসপেডিয়াস (Hypospadias)

হাইপোসপেডিয়াস ছেলেদের একটি জন্মগত রোগ যাতে মূত্রনালীর বহির্মুখ স্বাভাবিক স্থানে না হয়ে পুরুষাঙ্গের তলদেশে অবস্থান করে।মানুষের জন্মগত অস্বাভাবিকতার মধ্যে এটি দ্বিতীয় যা প্রতি ২৫০ জন পুরুষের মধ্যে একজনে হয়ে থাকে। হাইপোসপেডিয়াসের জন্য পুরুষাঙ্গ বাঁকা হতে পারে
অধিক বাঁকা পুরুষাঙ্গ যৌন মিলনে অক্ষমতার কারণ হতে পারে। অতিমাত্রার (proximal) হাইপোসপেডিয়াস এ প্রস্রাবে গতি সামনে না গিয়ে নিচে যায় ও দাড়িয়ে প্রস্রাব করতে পারে না এবং এজন্য পুরুষের যৌন এবং প্রজনন ক্ষমতা খর্ব হতে পারে।

🔶 হাইপোসপেডিয়াস এর সমস্যা সমুহঃ

১) পুরুষাঙ্গ বাকা থাকে।
২) মূত্র সামনের দিকে না গিয়ে নিচের দিকে যায়।
৩) বেশি মাত্রায় (Penoscrotal/ Scrotal variety) থাকলে শিশু দাড়িয়ে প্রসাব করতে পারে না।
৪) পুরুষাঙ্গ যখন শক্ত হয় তখন ব্যথা করে।
৫) সহবাসের সময় শুক্রাণু যোনিপথে না গিয়ে বাহিরে পড়ে।
৬) শিশুরা মানসিক সমস্যায় ভুগে যখন সে দেখতে পায় সে অন্য বাচ্চাদের মতো প্রসাব করতে পারে না।

🔶 রোগের কারণসমূহ :
এ রোগের প্রকৃত কারণ অজানা, তবে জেনেটিক্স , এন্ডোক্রাইন এবং পরিবেশগত কিছু উপাদান এ রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পরিবারে একজনের এ রোগ থাকলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২০ ভাগ।
মায়ের কিছু কারণ শিশুর হাইপোস্প্যাডিয়াস হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যার মধ্যে মা যারা:
• অতিরিক্ত ওজন বহন (স্থূলতা)।
• বয়স 35 এর বেশি।
• গর্ভবতী হওয়ার জন্য উর্বরতা চিকিত্সা ব্যবহার করুন (সম্ভবত প্রজেস্টেরনের সংস্পর্শে আসার কারণে, নিষিক্তকরণের সময় ব্যবহৃত একটি হরমোন)।গর্ভাবস্থার আগে বা গর্ভাবস্থায় অন্যান্য হরমোন ব্যবহার করুন।
• কীটনাশকের সংস্পর্শে থাকতে হবে।
• ধোঁয়া।

🔶 হাইপোসপেডিয়াস এর সাথে অন্য সমস্যা:

এ রোগের সাথে আরও কিছু জন্মগত সমস্যা থাকতে পারে যেমন, অন্ডকোষ অন্ডথলিতে না নামা (Undescedent testis). কুচকির হারনিয়া (Inguinal hernia),কিডনির অস্বাভাবিক গঠন, ভেসিকো ইউরোটেরাল রিফ্লাক্স (Vesicoureteral Reflux) ইত্যাদি।

🔶 চিকিৎসা :

অল্পমাত্রার (Distal) হাইপোসপেডিয়াস : যেখানে মূত্রনালীর মুখ পুরুষাঙ্গের শীর্ষের কাছাকাছি থাকে, প্রস্রাব সম্মুখে প্রবাহিত হয় এবং পুরুষাঙ্গ বাঁকা নয় এক্ষেত্রে সাধারণ ছোট শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। মধ্যম এবং অতিমাত্রার হাইপোসপেডিয়াসের জন্য জটিল শল্য চিকিৎসা প্রযোজন হয়। অনেক সময় ২ বা ৩ ধাপে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করতে হতে পারে।

শল্য চিকিৎসার উদ্দেশ্য :

* প্রস্রাবের গতি সামনের দিকে করা

* বাঁকা পুরুষাঙ্গ সোজা করা

* গ্রহণযোগ্য সুন্দর পুরুষাঙ্গ গঠন

* বন্ধ্যাত্ব নিঃসরণ

শিশুর বয়স ৬ মাস থেকে ২ বছর হল অপারেশন করার উপযুক্ত সময়। তবে যে কোন বয়সেই এই অপারেশন করা যায়।

শল্য চিকিৎসায় জটিলতা :

* ফিস্টুলা বা নতুন তৈরি করা মূত্রনালীর মধ্যে ছিদ্রের সৃষ্টি হওয়া সমস্যাটাই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য পুনরায় অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।
* মূত্রনালীর সংকোচন (meatal stenosis) আরও একটি সমস্যা প্রায়ই ফিস্টুলার সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়। মূত্রনালীর সংকোচনের জন্য পুনঃ অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

তবে সব ধরনের জটিলতার ভাল চিকিৎসা আছে। আধুনিক শল্যচিকিৎসার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেরও হাইপোসপেডিয়াস চিকিৎসা সফলতা ক্ষেত্রে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। তাই এই সমস্ত জটিলতা এখন কমই দেখা যায়।

🔺 হাইপোসপেডিয়াস নিয়ে আমার একটি গবেষণা পত্র ২৯/০৮/২০ তারিখে ইংল্যান্ডের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। অপনারা আরও কিছু জানতে চাইলে আমার জার্নালটি পড়ে দেখতে পারেন, যেখানে আমার অপারেশন করা ৪০ টি রুগি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গবেষণা পত্রটির লিঙ্কঃ
https://ecronicon.com/ecpe/ECPE-09-00798.php

ডাঃ নাজমুল ইসলাম
এমবিবিএস, এমএস (শিশু সার্জারি)মেম্বার হাইপোসপেডিয়াস ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি
সহকারি অধ্যাপক
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট
Hotline : 01777331511

https://www.facebook.com/Dr-Nazmul-Islam-109878390893553/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *